ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণে হুমকীর প্রতিবাদে সমাবেশ

ইসলামে উগ্রবাদের স্থান নেই, ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্রতিহত করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক :: ইসলাম আমাদের ধর্ম। ইসলাম ধর্মের বিধিবিধানে ধর্মীয় ইস্যুতে বাড়াবাড়ি করার সুযোগ নেই। ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্ক করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, নিষেধ করা হয়েছে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টিতে। ইসলামে উগ্রবাদের স্থান নেই। তাই ধর্ম নিয়ে বারাবাড়ি থেকে বিরত থাকুন। আসুন প্রকৃত ইসলাম চর্চা করি।

শনিবার (২৮ নভেম্বর) বিকালে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘অপরাজেয় বাংলা’ কক্সবাজার জেলা শাখা আয়োজিত ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হকসহ তার দোসররা বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণে হুমকী দেয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা উপরোক্ত কথা বলেন।

প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অপরাজেয় বাংলা এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব এইচ, রহমান নিলু।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজ, রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মন্ডল ও কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ,এম নজরুল ইসলাম।

এতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মী ছাড়াও সাংবাদিক-চিকিৎসক-সংস্কৃতিকর্মী-নারীনেত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অপরাজেয় বাংলা’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব এইচ, রহমান নিলু বলেন, বাংলাদেশের স্থপতির ভাস্কর্য টেনে, হিঁচড়ে নামাবে বলে কোনো কোনো ধর্মীয় নেতা ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন। তাদের এমন রুচি এবং ভাষা ব্যবহার দেখে তাদের ধর্মচর্চা ও ইসলামী রুচিবোধ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আলেম-উলামা মাশায়েখের নাম দিয়ে কিছু লোক মাঠ উত্তপ্ত করছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য্যরে বিরোধিতা করছে। ইসলামে উগ্রবাদের স্থান নেই। তাদের কথার সঙ্গে ইসলামের কোনো মিল নেই। কিন্তু আলেমদের নাম করে যারা উগ্রবাদের কথা বলছে সেটা ইসলাম বলে না। ইসলাম শান্তির কথা বলে। তাই এসব ধর্ম ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে একটি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রিয় মানুষের মনে বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টা করছে। ভাস্কর্যকে যারা মূর্তি বলে অপপ্রচারে নেমেছে, তারা নিজেরাই ভ্রান্তিতে আছে। দেশের আলেম সমাজ এবং বিশেষজ্ঞগণ ইতিমধ্যেই বারবার বলেছেন, মূর্তি আর ভাস্কর্য এক নয়।

ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজ বলেন, পবিত্র কোরআনের সুরা সাবার ১৩ নম্বর আয়াতে বর্ণিত ‘তামাসিলা’ এবং সুরা ইব্রাহিমের ৩৫ নম্বর আয়াতে বর্ণিত ‘আসনাম’ শব্দ দুটি এক নয়। কাজেই মুফাসসিররা মনে করেন তামাসিলা মানে ভাস্কর্য আর আসনাম মানে প্রতিমা পূজা। এ দুটি শব্দকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রকৃত ইসলাম চর্চার আহ্বান জানিয়ে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

প্রতিবাদ সমাবেশে রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল বলেন, ইসলামী দলগুলোর ভেতরে জামায়াত-শিবির ঢুকে পড়েছে এবং তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দেওয়ার উসকানি দিয়েছে। এই ফ্যাসিস্ট-মৌলবাদী, জামায়াত-শিবিরের স্থান বিপ্লবের তীর্থভূমি কক্সবাজারে হবে না, সারা বাংলাদেশেও হবে না। আমরা একাত্তরে তাদের একবার পরাজিত করেছি, প্রয়োজনে আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু হবে।

কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম বলেন, জামায়াত-শিবির সবার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আজ আমাদের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এদের কোনোভাবে জায়গা দেওয়া যাবে না। এরা জাতশত্রু। এরা কোনোদিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব মানবে না। আমরা তাদের প্রতিহত করবো। সবাইকে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। আমাদের চেতনা আজ ভোতা হয়ে গেছে। চেতনাকে শাণিত করতে হবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে যদি আমরা মাঠে নামি, তাহলে কোনো শক্তি আমাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল বলেন, যে মানুষটি সারাজীবন নিজের দেশের জন্য নিজেকে সপে দিয়েছেন। যার অসমান্য অবদানে লাল-সবুজের এর পতাকার সৃষ্টি। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য টেনে-হিঁচড়ে নামাবে বলে কোনো কোনো ধর্মীয় নেতা ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন, তাদের এমন রুচি ও ভাষা ব্যবহার দেখে তাদের ধর্মচর্চা ও ইসলামি রুচিবোধ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তাদের এই দৃষ্টতার কঠোর জবাব দিতে হবে। কক্সবাজারেই বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাস্কর্য তৈরি করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনে গঠন করা হবে গণতহবিল।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ, এম নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এখনো সক্রিয়। তারা ঝোপ বুঝে কোপ মারছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারম কেন্দ্রীয়ক মৌলবাদীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ সেখান থেকে তারা স্বাধীনতা বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তাই আর বসে থাকলে চলবে না। সময় এসেছে ষড়যন্ত্রকারীদের সমুচিত জবাব দেয়ার।

অপারেজয় বাংলা কক্সবাজার জেলা শাখার সদস্য প্রতিবাদ সমাবেশের সমন্বয়ক জাফর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অপারেজয় বাংলার কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সফিউল হক পলাশ, পৌর আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক এড. রিদুয়ান আলী, জেলা অপারেজয় বাংলার নির্বাহী সদস্য ওসমান গণি, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মঈন উদ্দিন ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হক শাকিল।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মনজুর আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কবি আসিফ নুর, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল, সাবেক ছাত্রনেতা হিল্লোল দাশ, সাংস্কৃতিককর্মী ওয়াহিদ মুরাদ সুমন, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সুজন শর্মা, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অপারেজয় বাংলা রামু শাখার সদস্য সচিব শেখ জুনায়েদ বিপ্লব, রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইউনুচ রানা চৌধুরী, নুরুল হক চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সেলিম, প্রচার সম্পাদক সন্তোষ বড়ুয়া, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল, চাকমারকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন সিকদার প্রমূখ।

পাঠকের মতামত: